Source: Bonik Barta
দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি এখন তিস্তা সোলার লিমিটেডের। বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এটি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অবস্থিত ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বর্তমানে বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে। দেশে নবায়নযোগ্য খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে এটি বাস্তবায়ন করেছে বেক্সিমকো। নবায়নযোগ্য খাতে কোম্পানিটির বিনিয়োগ, আগামীর পরিকল্পনা এবং এ খাতের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শায়ান এফ রহমান
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করছে সরকার। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এখন এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রিন এনার্জিতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা কী?
আপনি জানেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা (বেসরকারি উদ্যোক্তারা) বিদ্যুৎ খাতে কাজ করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণের লজিস্টিক সাপোর্টের জায়গায় সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সেক্টরের বড় অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ খাতের বেশির ভাগ উন্নয়ন বেসরকারি খাত থেকেই হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী এখন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশও সেই দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা এখন কাজ করছি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ খাত শুধু পরিবেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান, জীবনমান উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোও এখানে গুরুত্ব পাচ্ছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলে আপনাকে গ্যাস, জীবাশ্ম জ্বালানি বা কয়লা ব্যবহার করতে হচ্ছে না। যে কারণে আমার মনে হয়, শুধু পরিবেশের ক্ষতি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি নয়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এবং আমাদের ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি ও প্রবৃদ্ধির জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বেক্সিমকো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সোলার প্লান্ট নির্মাণ করেছে। যেটা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) রয়েছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে বিনিয়োগের জন্য আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি এবং সরকারের সঙ্গেও কথা বলছি। সারা দেশে অনেকগুলো জায়গা রয়েছে, যে জায়গাগুলো সরকার ইয়ারমার্ক করে রেখেছে। যেসব জায়গায় সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সোলার করতে চায়, ওইসব জায়গায় ফিজিবিলিটি স্টাডি করে বেক্সিমকো পাওয়ার পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেক্টরে লিডার হয়ে দাঁড়াতে চায়।
দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বেক্সিমকোর। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সক্ষমতায় এটি কোম্পানিটির বড় অর্জন। আগামীতে সৌরবিদ্যুতে আর কী ধরনের বিনিয়োগ ও সম্ভাবনা দেখছেন?
সৌরবিদ্যুতে আমরা দেশের অনেকগুলো জায়গায় ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছি। বেশির ভাগ জায়গায় ইতিবাচক ফল এসেছে। কয়েকটা প্রকল্প নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। বর্তমানে সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ে আলাপ করছি। পিপিএ চূড়ান্ত করার জন্য আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। আপনারা জানেন যে এসব প্রকল্পের বিষয়গুলো চূড়ান্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিশেষ করে এখানে ভূমি পরীক্ষা থেকে ওই এলাকায় সূর্যের কী অ্যাঙ্গেলে আলো পড়ছে, সেটাকে কীভাবে টেকসই করা যায় সেই বিষয়গুলো জড়িত আছে। এসব নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এরপর কিন্তু আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি। নবায়ণযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছি। সেই অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নবায়নযোগ্য খাতে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবেলা করছেন? বড় কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখছেন কিনা।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ বিশ্বব্যাপী। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, পুরো পৃথিবীতে এ খাতের বড় সমস্যা ভূমির। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে অনেক জমির প্রয়োজন হয়। প্রধান চ্যালেঞ্জটা এখানেই। এত জমি একসঙ্গে দেশের কোথাও পাওয়া যায় না। যদিও সরকার দেশের অনেক পতিত জমি, চরাঞ্চলসহ অনেক জায়গা ইয়ারমার্ক করেছে। যেখানে জমি লিজ নিয়ে প্রাইভেট সেক্টরকে দিচ্ছে। এ সহযোগিতা সরকারের কাছ থেকে অব্যাহত থাকলে প্রাইভেট সেক্টরের জন্য বিনিয়োগটা অনেক সহজ হয়। তিস্তা সোলারের বিষয়টি যদি দেখেন সেখানে কিন্তু বিশাল এলাকাজুড়ে আমরা (বেক্সিমকো) প্রজেক্টটা করেছি। ওই এলাকায় নদীর বাঁধ বা রাস্তার কথা যদি বলেন সবকিছুই আমরা ডেভেলপ করে দিয়েছি, যেন এলাকাবাসীরও কোনো অসুবিধা না হয়। প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পরও যেন ওই জায়গাটা স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যবহার করতে পারে, চলাফেরা করতে পারে। সেজন্য তিস্তার বাঁধ এলাকায় কাজ করেছি। শুধু ওই পাওয়ার প্লান্ট নয়, তার পাশাপাশি পুরো এলাকার মানুষের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। যদি প্রাইভেট সেক্টরের কোম্পানিগুলো স্থানীয় প্রকল্প এলাকার কাছাকাছি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে, তাহলে জমির যে কথা বললাম, সেটা কিন্তু আরো সহজ হতে পারে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দাম গ্রিডের বিদ্যুতের চেয়ে এখনো অনেক ব্যয়বহুল। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন?
গ্রিডের বিদ্যুতের দাম সাশ্রয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। সরকার এখানে ভতুর্কি দেয়, এছাড়া গ্রাহকের কাছে যে দামে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে, সেটি অনেকগুলো ইকোনমিক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। সরকারকে অনবরত এসব বিষয়কে পরিবর্তন করতে হয়। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দাম কম রাখার ক্ষেত্রে আমরা ন্যাশনাল সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে, নবায়নযোগ্য কোম্পানিগুলোর কাছে যে ধরনের ডাটা রয়েছে, সেই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে কীভাবে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ যত কম দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব, তত কম দামে আমরা সরকারকে দিতে পারব। ততই কম দামে ভোক্তারা বিদ্যুৎ পাবে।
দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য খাতে বেক্সিমকোর বিনিয়োগ রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের আর কোনো অংশে বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা রয়েছে কি?
এ মুহূর্তে আমরা নতুন সেক্টর নিয়ে ভাবছি না। আমদের এলপিজি যেটা বর্তমানে আছে, সেটাকেই আরো উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। সেটার সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে বাড়ছে, সেখানে ভোক্তাদের চাহিদাও বড় হচ্ছে। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি এ জায়গায় মনোযোগ দেয়ার।
দেশে বিদ্যুৎ সক্ষমতা এখন ২৭ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সক্ষমতা বাড়লে এ সক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে। ব্যবহার না হলে এসব প্রকল্পের আর্থিক ঝুঁকি দেখেন কি?
আমার মনে হয়, গ্রিডের বর্তমান যে ক্যাপাসিটি রয়েছে সেটি কীভাবে ডিস্ট্রিবিউশন করা যায় এবং সেটার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যুৎ খাতের স্থায়িত্ব। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্যে শুধু গ্রিডে অ্যাডিশনাল ক্যাপাসিটি অথবা পাওয়ার যোগ করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিদ্যুৎ সক্ষমতা যখন বিচক্ষণতার সঙ্গে বিতরণ ও ব্যবহার করতে পারব, তখন আসলে আমরা বুঝতে পারব এ খাত আমরা কীভাবে পরিচালিত করছি।
আমার মনে হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন করার জন্য সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার জন্য যা করা দরকার সরকার সেগুলো করছে। একটা জিনিস আমি আগেও বলেছি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য জমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রাইভেট সেক্টরের জন্য এত বেশি জমি বেসরকারিভাবে কেনা সম্ভব হয় না। ওই জায়গা থেকে সরকার যদি জমি অ্যাকোয়ার (অধিগ্রহণ) করে প্রাইভেট সেক্টরকে সহযোগিতা করে, তাহলে আমি মনে করি প্রাইভেট সেক্টর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অনেক বেশি সহায়তা করতে পারবে।